দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে কুষ্টিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা মসজিদের পাশে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তার সঙ্গে আরও এক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ আটজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০টি ম্যাগাজিন।
জানা যায়, ঢাকার অপরাধ জগতে সুব্রত বাইন এক সময় ছিল পরিচিত নাম। নব্বইয়ের দশকে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং খুন-জখমের মতো ঘটনায় নিয়মিত তার নাম উঠে আসত। পুলিশের খাতায় তার নাম—ত্রিমাতি সুব্রত বাইন। রাজধানীর মগবাজারে তার প্রভাব ছিল শীর্ষ পর্যায়ে। ওই সময়ে রাজধানীর দক্ষিণাংশে অপরাধ দুনিয়ার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে।
সুব্রতর জন্ম ১৯৬৭ সালে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। পৈতৃক বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামে। বাবা বিপুল বাইন ছিলেন একটি এনজিওর গাড়িচালক। মা কুমুলিনি বাইন ও তিন বোন মেরি, চেরি ও পরীকে নিয়ে মগবাজারে বাস করতেন তারা। শৈশবে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও পরে ঢাকায় চলে আসেন। এসএসসি পাস করে সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করলেও কলেজে আর যাওয়া হয়নি তার। এক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে অপরাধ জগতে পা রাখেন।
১৯৯৩ সালে মধুবাজারে এক সবজি বিক্রেতাকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের নজরে আসে তার নাম। এরপর বিশাল সেন্টারে চাঁদাবাজি নিয়ে গোলাগুলির ঘটনায় প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে আসে সুব্রতর নাম। ধীরে ধীরে মগবাজারে গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। স্থানীয় রাজনীতিকদের আশ্রয়ে হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া।
১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ট্রিপল মার্ডারে নেতৃত্ব দেন সুব্রত। সিদ্ধেশ্বরীর খোকন, মগবাজারের রফিকসহ অনেককে হত্যা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ১৯৯১ সালে আগারগাঁওয়ে মুরাদ হত্যা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৯৯৭ সালে নয়াপল্টনের একটি হাসপাতাল থেকে গোয়েন্দা পুলিশের এসি আকরাম হোসেন তাকে গ্রেপ্তার করেন। বছর দেড়েক জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান। ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সরকারের প্রকাশ করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় শীর্ষে ছিল তার নাম। ইন্টারপোলও তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে।
পালিয়ে যান কলকাতায়। সেখানে জমি কিনে নাগরিকত্বের সব কাগজপত্র জোগাড় করেন। তবে ২০০৮ সালে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। জামিনে ছাড়া পেয়ে দুবাই চলে যান। পরে কলকাতায় ফিরে এক অভিনেত্রীর কাছে চাঁদা দাবি করলে ফের তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যান নেপালে। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে নেপালি পুলিশ। রাখা হয় ঝুমকা কারাগারে।
২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সেই কারাগার থেকে ৭৭ ফুট দীর্ঘ সুড়ঙ্গ কেটে পালিয়ে যান সুব্রত বাইন। আবার কলকাতায় ফিরে এলে বউবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এরপর থেকে ছিলেন কারাগারে।
কলকাতা থেকে বসেই ঢাকার অপরাধ দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। ঠিকাদারদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া টেন্ডারের চাঁদার টাকা দিয়ে নদীয়ায় কিনেছেন ৫০ বিঘা জমি ও বাগানবাড়ি।